সাধারণ কিছু আয়াত, অসাধারণ সব লুকানো তথ্য

কু’রআনের আয়াতগুলো ভাষাতত্ত্ববিদদের জন্য তথ্যের খনি। আল্লাহ খুব সাধারণ দেখতে কিছু আয়াতে, সাধারণ কিছু গল্প বা কথোপকথনের মধ্য দিয়েই অসাধারণ সব তথ্য প্রকাশ করেন। যখনই কু’রআনের কোন আয়াতে কোন কথোপকথন আসে, তখনই দেখবেন আল্লাহ আমাদেরকে কথোপকথনের শব্দ, বাক্যগুলোর মধ্যে দিয়ে এই তথ্যগুলো তথ্য দেনঃ

  • বক্তার সংখ্যা, প্রকৃতি, জ্ঞান, মানসিকতা।
  • স্রোতার সংখ্যা, প্রকৃতি, জ্ঞান, মানসিকতা।
  • বক্তা এবং শ্রোতার মধ্যে সম্পর্ক।
  • কথোপকথনের আগে কি ঘটে গেছে এবং অনেক সময় তার পরে কি ঘটবে।
  • আশেপাশের অবস্থা, প্রেক্ষাপট। আশে পাশে যারা আছে তাদের ভুমিকা।

যেমন, নিচের আয়াতটি দেখুন যেখানে আল্লাহ আমাদেরকে একটি স্ত্রী পিঁপড়ার একটি মাত্র কথার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে পিঁপড়াদের সম্পর্কে কত ধরণের তত্থ্য দিয়েছেনঃ

আর যখন তারা পিঁপড়াদের উপত্যকায় পৌছিয়েছিল, একটি পিঁপড়া(স্ত্রী) বলেছিল, “হে পিঁপড়ারা, তোমাদের ঘরগুলোতে প্রবেশ কর, যাতে করে সুলায়মান এবং তার বাহিনী তোমাদেরকে না বুঝে পিষে না ফেলে”। (২৭:১৮)

আপনার কাছে মনে হবে, এত ছোটদের কোন গল্পের বইয়ের মত। এখানে পিঁপড়াদের সম্পর্কে আল্লাহ নতুন কি জানালেন আমাদেরকে। লক্ষ্য করুন, এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে পিঁপড়াদের সম্পর্কে কতগুলো তথ্য দিয়েছেনঃ

  • “একটি পিঁপড়া(স্ত্রী) বলেছিল” – পিঁপড়া এখানে স্ত্রী লিঙ্গ, পুরুষ লিঙ্গ নয়। বাসার বাইরে স্ত্রী পিঁপড়া থাকে, পুরুষ পিঁপড়া নয়। আমরা এখন জানি স্ত্রী পিঁপড়ারা কর্মী পিঁপড়া, পুরুষরা শুধুই প্রজনন[1] কাজের জন্য বেঁচে থাকে।
  • “হে পিঁপড়ারা”  – বহুবচন যার অর্থ একটি স্ত্রী পিঁপড়া এক সাথে অন্য একাধিক পিঁপড়াদেরকে নির্দেশ দিতে পারে। পিঁপড়া ফেরোমোন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের প্রতি সংবেদনশীল এবং এর দ্বারা তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে[2]। এছাড়াও কিছু প্রজাতির পিঁপড়ারা নিয়ার-ফিল্ড[3] শব্দ তৈরি করে আশেপাশের পিঁপড়াদের সাথে যোগাযোগ করে। এভাবে একটি পিঁপড়া একই সাথে একাধিক পিঁপড়াকে সংকেত দিতে পারে। এই আয়াতে আল্লাহ “বলেছিল” ব্যবহার করেছেন, যা মানুষের কথা বলার বেলায়ও ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ মানুষ যেমন শব্দ দিয়ে কথা বলে, সে রকম পিঁপড়াও শব্দ ব্যবহার করে যোগাযোগ করে, যা বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর আগে আবিস্কার করেছেন। কয়েক বছর আগেও বিজ্ঞানীরা মনে করতেন পিঁপড়া কোন শব্দ করতে পারেন না এবং তাদের শব্দ শোনার ক্ষমতা নেই।
  • “তোমাদের ঘরগুলোতে প্রবেশ কর” – পিঁপড়াদের একাধিক ঘর রয়েছে। একটি পিঁপড়ার বাসা অনেকগুলো সংযুক্ত ঘর এবং নির্দিষ্ট পিঁপড়া নির্দিষ্ট ঘরে থাকে। স্ত্রী পিঁপড়া জানে পিঁপড়ারা যদি বাসায় ঢুকে পড়ে, তাহলে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। পিঁপড়ার বাসা আর্কিটেক্টের জন্য এক বিস্ময় এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অসাধারণ নিদর্শন।
  • “যাতে করে সুলায়মান” – স্ত্রী পিঁপড়াটি নবী সুলায়মানকে চিনতে পেরেছিল। যার অর্থ স্ত্রী পিঁপড়া অনেক মানুষের মধ্যে কোন একজনকে চিনতে পারে। মানুষের গা থেকেও ফেরোমোন বের হয়। ধারণা করা হয় স্ত্রী পিঁপড়া হয়ত নবী সুলায়মানের গা থেকে বের হওয়া ফেরোমোন সিগনেচার দিয়ে তাকে চিনতে পেরেছিল, যেভাবে কুকুর প্রতিটি মানুষকে চিনতে পারে। এছাড়াও এখানে লক্ষণীয় যে স্ত্রী পিঁপড়া আগাম বিপদ অনুধাবন করে সংকেত দিতে পারে। অর্থাৎ তাদের এতটুকু বুদ্ধিমত্তা আছে যে তারা বিপদ আগে থেকেই আঁচ করতে পারে।
  • “এবং তার বাহিনী” – পিঁপড়া বুঝতে পেরেছিল যে একটি বাহিনী আসছে। পিঁপড়ারা তাদের পা দিয়ে মাটিতে কম্পন অনুভব করতে পারে। একারণে তারা দূরে থেকেই বুঝতে পারে কেউ তাদের দিকে আসছে কিনা। একটি বাহিনী মাটিতে ব্যাপক কম্পন তৈরি করবে।
  • “তোমাদেরকে না বুঝে পিষে না ফেলে” – স্ত্রী পিঁপড়া আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে নবী সুলায়মান এবং তার বাহিনী না বুঝে পিঁপড়াদেরকে পিষে ফেলবে। সুতরাং স্ত্রী পিঁপড়া তার আশেপাশের অবস্থা পর্যালোচনা করে বিপদের প্রকৃতি সম্পর্কে আগে থেকেই বুঝতে পারে।

বিজ্ঞানীদের জন্য এই আয়াতে আল্লাহ অনেকগুলো ইংগিত দিয়ে রেখেছেন। প্রথমত বাসার বাইরে যে পিঁপড়ারা থাকে তারা সবাই স্ত্রী পিঁপড়া। পুরুষ পিঁপড়া সবসময় বাসার ভিতরে থাকে। সমস্ত কর্মী পিঁপড়া স্ত্রী। দ্বিতীয়ত কিভাবে একটি পিঁপড়া হাজার হাজার পিঁপড়ার সাথে যোগাযোগ করে রাসায়নিক পদার্থ এবং গন্ধ দিয়ে, যা একটি অত্যন্ত সফল মাধ্যম নির্ভরযোগ্য ভাবে তথ্য সম্প্রচার করার জন্য। তৃতীয়ত কিভাবে হাজার হাজার পিঁপড়া সংকেত পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাসায় ঢুকে পড়ে খুবই অল্প সংঘর্ষ করে, যা কিনা বিজ্ঞানিদেরকে যানবাহনের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নততর করার জন্য আইডিয়া দিয়েছে। চতুর্থত, এককভাবে প্রতিটি পিঁপড়ার বুদ্ধি অল্প, কিন্তু হাজার হাজার পিঁপড়া সম্মিলিত ভাবে উচ্চতর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয় যাকে “সোয়ার্ম ইন্টেলিজেন্স” বলে। পঞ্চমত, পিঁপড়ার কোন সামাজিক শ্রেণী বিন্যাস নেই। তাদের কোন দলনেতা নেই। কিভাবে হাজার হাজার পিঁপড়া কোন দলনেতা, রাজা বা রাণী পিঁপড়ার নিয়ন্ত্রন ছাড়া প্রত্যেকে নিজের নিজের কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করে যায়, তা এখনও একটি বিরাট বিস্ময় এবং এনিয়ে গত বিশ বছর ধরে গবেষণা চলছে। মানুষ যদি এরকম উন্নততর যান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে যার কোন কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই এবং একটি বিশাল যন্ত্রের প্রতিটি অংশ নিজে থেকেই সবসময় সঠিক কাজ করে যাবে, তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক সমস্যার সমাধান করা যাবে।

সম্ভবত এই কারনেই আল্লাহ বলেছেনঃ

যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর [নিখুঁত] করেছেন … (৩২:৭)

বিজ্ঞান এভাবে অবিশ্বাসীদের কাছে কু’রআন যে একটি ঐশ্বরিক গ্রন্থ তা প্রমাণ করে, আর কু’রআন বিজ্ঞানকে পথ দেখায়।

[অনুপ্রেরণাঃ সুলাইমান এবং পিপড়াটি – ইয়াহইয়া ইব্রাহিম[4]]

By ওমর আল জাবির

কু'রআনকে গভীরভাবে ভালবাসি। সত্যকে জেনে, তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে অন্যদেরকে অনুপ্রেরণা দেবার চেষ্টা করি।

15 comments

  1. কোরানের মধ্যে বিজ্ঞান খোজ করা আমার নিকট এখন্ও পর্যন্ত পছন্দনীয় বিষয় নয়। কোরান হচ্ছে হেদায়েতের গ্রন্থ, সেখান থেকে বিজ্ঞান খোজ করা উচিত হয়। বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে হলে বিজ্ঞানের বই পড়া উচিত।

    1. মাহফুয, আল্লাহ কু’রআনে যদি ২০০ টির বেশি আয়াতে আমাদেরকে বলেন তার সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা করতে এবং শখানেক ইংগিত দিয়ে রাখেন কি নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে এবং আমরা যদি সেটা না করি তাহলে আমরা আল্লাহর প্রায় ২০০টার বেশি আদেশ অমান্য করবো। কু’রআনে ৮১ টা আয়াতে নামায পড়তে বলা আছে আর ২০০+ আয়াতে বৈজ্ঞানিক, গাণিতিক, দার্শনিক তথ্য দেওয়া আছে। আপনার কি মনে হয়? এরচেয়ে বেশি আল্লাহ কি বলতেন কু’রআনে আমাদেরকে বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করার জন্য এবং কু’রআন থেকে অনুপ্রেরণা নেবার জন্য?

      আমি আপনাকে অনুরোধ করবো পুরো কু’রআন বুঝে একবার পড়ার। আপনার দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন হবে, ইন শাআ আল্লাহ।

      1. আমিও চাই আমার অনেক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হোক; প্রতি বছর একবার করে অনুবাদিত কোরান পড়ে শেষ করি; কিন্তু কিছুতেই মনে টান অনুভব করি না। এর চেয়ে যদি না বুঝে আরবী তেলাওয়াত শুনি তাহলে মন-প্রাণ ভরে যায়। একবার একজনের তেলাওয়াত শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়েছিল।

        1. নওমান আলি খানের লেকচার গুলো শুনে দেখুন। আশাকরি সেগুলো আপনাকে কু’রআনের অর্থ উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।

  2. vaia,quran ee joto gula boighhanik ayaat ase ar egulu shomporke jei boiti te khub beshi alochona koreche r qurane koon koon ayat gulute boighhanik nidorshon deowa hoiche oidhoroner boi er name bolun vha website link ta din..jei boi theke apni pipda shomporke eto bistarito alochona peye chen vai.jajakumullah khairan.

  3. ভাইয়া,আমাকে এমন একটা কুরআনের আয়াত বা হাদিসের উদৃতি দেন যোটার ম েধ্য লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু শুদু নই এবং মুহামাদ্দুর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লিখা আছে।আমাকে একজন ভাই প্রশ্ন করেছেন…

    1. কু’রআনে শুধু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ রয়েছে।
      কিছু হাদিসে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ অংশটির উদাহরণ রয়েছে—
      http://sunnah.com/tirmidhi/40/4
      http://sunnah.com/nasai/37

      প্রশ্ন করুণ: মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ থাকলে সমস্যা কী? যখন কেউ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলছে, সে ঘোষণা দিচ্ছে মুহাম্মাদ ﷺ একজন রাসুল, সুতরাং কু’রআন সত্যিই আল্লাহর ﷻ বাণী। তিনি যদি রাসুল না হতেন, কু’রআন আল্লাহর ﷻ বাণী হত না। কু’রআন আল্লাহর ﷻ বাণী না হলে, কু’রআনের কোনো কথার কোনো মূল্য নেই। সুতরাং কেউ যদি কু’রআনকে সত্যিই আল্লাহর ﷻ বাণী মনে করে, তাহলে তাকে প্রথমে ঘোষণা দিতে হবে: মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

      আপনি প্রশ্ন করুণ: যদি কেউ ঘোষণা না দেয় যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর ﷻ রাসুল, তাহলে তারা কাকে রাসুল মানে?

      মুসা নবীর অনুসারীদের মেনে নিতে হয়েছে: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুসা রাসুলুল্লাহ।

      ঈসা নবীর অনুসারীদের মেনে নিতে হয়েছে: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ঈসা রাসুলুল্লাহ।

      ঠিক একইভাবে আমাদেরকে মেনে নিতে হবে: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

      প্রত্যেক রাসুলের উম্মতকে ঘোষণা দিতে হয়েছে যে, তারা সেই রাসুল্কে রাসুল হিসেবে মানে। যদি সেই ঘোষণা কেউ না দেয়, তার মানে সে ঘোষণা দিচ্ছে যে সেই রাসুলের বাণী আল্লাহর ﷻ বাণী নয়।
      রাসুলে বিশ্বাস করা ঈমানের একটি শর্ত, যা সূরা বাকারাহতে ৪ আয়াতে বলা হয়েছে।

  4. vai জাবির আপনার মত কিছু অল্প বিদ্যা দলিলি লেখকদের জন্য . ইসলামের সত্য থেকে মানুষ আজ দুরে . . আপনি হচ্ছেন একজন শুনে মুসলমান . তাই আগে ইবাদত করুন . নবীর প্রেমে মজুন . .হয়তো বা আল্লাহ আপনাকে দয়া করে এলমে মারেফাত শিক্ষা দান করতেও পারে .আর হিন্দু ,খ্রীস্টান জিসু সুফি গনেশকে নিয়েও আপনার পোস্ট দেখলাম … আশ্চর্য হলাম আপনার সাহস দেখে .. আপনি ভ্রান্ত যুক্তি দেখিয়ে সবাইকে মিথ্যা প্রমান করে দিচ্ছেন .ভাই পারেনও . আমার আল্লাহ চাইলে মুহুর্তে . সব ধর্ম ভ্যানিস করে দিতেন। কিন্তু না তিনি সত্যের রক্ষা করেন . .তাই বারাবারি না করে নিজে কিভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করবেন সেটা ভাবুন . . ঈমান ঠিক করুন। আগে একজন সত্য মানুষ হোন ! মুসলমান এত সহজে হয়না।

    1. জ্বী ভাই, অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাবধান করে দেওয়ার জন্য। আল্লাহ আপনাকে জাযা এবং হিদায়াহ দিন।

  5. পিপড়াটি যে স্ত্রী পিপড়া এটা () এর মদ্ধে রাখসেন কেনো, ,,,,,? আর কোরানের অনুবাদে তো স্ত্রী পিপড়ার উল্লেখ থাকতে দেখলাম না?

    1. ব্যকরণগুলো আমি () এর মধ্যে রাখি। আরবিতে قَالَتْ نَمْلَةٌ এর অর্থ: “স্ত্রী পিঁপড়াটি বলল”। অনুবাদগুলোতে এরকম বিস্তারিত ব্যাকরণ দেওয়া হয় না। যেমন, আপনি কোনো অনুবাদে পাবেন না, স্ত্রী মৌমাছি, স্ত্রী কুকুর, স্ত্রী বাছুর, স্ত্রী মশা ইত্যাদি।

  6. ধন্যবাদ ভাই।। আপনাদের ব্লগ অনেক সাহায্য করেছে আমাকে। নাস্তিকদের জবাব দিতে। ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.