আপনার কাছে যেটা খারাপ সেটা অন্যের কাছে খারাপ নাও হতে পারে। যেমন ধরুন আপনার চাকরি চলে গেল। আপনার এখন মাথায় হাত। আপনি বাড়ি ভাড়া দিবেন কী করে? ছেলে মেয়ের পড়ার খরচ দিবেন কী করে? আপনার কাছে তখন মনে হবে, আল্লাহ আমার সাথে এরকম কীভাবে করতে পারলো? কিন্তু আমি আপনার চাকরি চলে যাওয়াতে খুব খুশি কারণ আপনার জায়গায় আমাকে নেওয়া হয়েছে। আমি গত পাঁচ বছর ধরে বেকার ছিলাম এবং আল্লাহ আমাকে কত দয়া করে চাকরিটা দিয়েছেন! আমি এখন আমার পরিবারকে একটা সচ্ছল জীবন দিতে পারবো। আমার অসুস্থ বাবা-মার চিকিৎসা করাতে পারবো। আমার এক রুমের ঘিঞ্জি ভাড়া বাড়ি ছেড়ে মোটামুটি একটা দুই রুমের বাসা নিয়ে পরিবারের সাথে একটু আরামে হলেও থাকতে পারবো। আপনি আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে নামায পড়া ছেড়ে দিলেন, আর এদিকে আমি আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া শুরু করলাম।
আল্লাহ্ আপনাকে একটা ছোট পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আপনি সেটায় ফেল করলেন।
… অনেক সময় তোমরা এমন কিছু পছন্দ করো না, যা আসলে তোমাদের জন্য ভালো; অনেক সময় তোমরা এমন কিছু পছন্দ করো, যা আসলে তোমাদের জন্য খারাপ। আল্লাহ যা জানেন, তা তোমরা জানো না। [বাকারাহ ২:২১৬]
ধরুন আপনার এক কঠিন অসুখ হল। আপনি বিছানায় শুয়ে চিন্তা করছেন, আমার মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি একটা মানুষকে আল্লাহ কিভাবে এরকম অসুখ দিল? ইসলাম ধর্মটা সত্যিই ধর্ম তো? আল্লাহ বলে আসলেই কেউ আছে তো? কিন্তু ওদিকে যেই ডাক্তার আপনার চিকিৎসা করছে, সে মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিচ্ছে তাকে আপনার মত একটা কেস দেওয়ার জন্য। সে আপনার চিকিৎসার উপর পেপার লিখে পি এইচ ডি করে ফেলবে। তারপর তার রিসার্চ ব্যবহার করা হবে হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসার জন্য। আপনার কঠিন অসুখের ফলে যত রিসার্চ হবে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের যত উন্নতি হবে এবং তার কারণে যত রোগীর চিকিৎসা সহজ হয়ে যাবে, সেদিক থেকে চিন্তা করলে আপনার সেই কঠিন অসুখ হওয়াটা মানব জাতির জন্য একটা বিরাট সুখবর। কিন্তু আপনি সেটা বুঝতে পারলেন না। আপনি যদি সত্যিই দাবি করেন যে আপনি আল্লাহ্র জন্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন, ৩০টা রোযা রাখেন, তারাবিহ পড়েন, যাকাত দেন, কিন্তু তারপর আপনার কোন বড় বিপদ হলে আল্লাহ্র উপরই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনার ইবাদতগুলো কতখানি আল্লাহ্র জন্য এবং কতখানি ‘লোকে কি বলবে’ সে জন্য, সেটা নিয়ে আপনার আরেকবার ভেবে দেখা উচিত।
যিনি মৃত্যু এবং জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, এটাই প্রকাশ করার জন্য যে, তোমাদের মধ্যে কে আসলেই ভালো কাজ করে। আল্লাহর প্রচণ্ড ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। [মূলক ৬৭:২]
আপনার স্বল্প বুদ্ধিতে যেটা খারাপ মনে হয় সেটা মানব জাতির জন্য ভালোও হতে পারে। আপনি মনে করতে পারেন যে, আপনি যে ব্যবসাটা অনেক চেষ্টা করেও ধরতে পারলেন না, সেটা যদি আপনি পেতেন, তাহলে আপনার, আপনার পরিবারের অনেক মঙ্গল হতো, অনেক গরিব লোকের চাকরির জোগান হতো। কিন্তু আপনি ভবিষ্যৎ জানেন না। আল্লাহ্ জানেন যে আপনাকে এই ব্যবসা করতে দিলে বরং আপনি ব্যবসায় লোকসান করে নিজেকে তো শেষ করতেনই, একই সাথে আপনার পরিবারের সর্বনাশ করতেন, অনেকগুলো গরিব লোকের বেতন না দিয়ে তাদেরকে চরম কষ্টে ফেলতেন, বিদেশের ক্লায়েন্টের কাছে দেশের দুর্নাম করতেন। যার ফলে তারা হয়তো এর পর বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা করার কথা আর চিন্তাও করবে না। এভাবে আমাদের দেশ কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট হারাবে। সুতরাং নিজেকে সবসময় কোন কিছু করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য মানুষ মনে করবেন না। আপনার চেয়ে আরও অনেক যোগ্য মানুষ পৃথিবীতে আছে, যাদেরকে আল্লাহ্ সুযোগ দেবার প্রয়োজন মনে করেন নি।
তোমরা কি দেখো না: কিভাবে আল্লাহ আকাশগুলোর এবং পৃথিবীর সবকিছুকে তোমাদের ভালোর জন্যই নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের উপরে কত প্রকাশ্য এবং গোপন কল্যাণ দিয়েছেন? তারপরেও কিছু মানুষ আল্লাহকে নিয়ে খামোখা তর্ক করে, যেখানে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, কোনো পথনির্দেশ নেই, নেই কোনো নিশ্চিত জ্ঞান সমৃদ্ধ বই। [লুকমান ৩১:২০]
আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে, যা কিছুই ভালো তা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যা কিছুই খারাপ তা হয় শয়তানের কারণে, এতে আমাদের কোনো হাত নেই। ভুল ধারণা। ভালো মন্দ সবকিছুই আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের জীবনে ভালো যা কিছু হয়, তা আল্লাহ্র অনুগ্রহে এবং যা কিছু খারাপ হয়, তা আমাদেরই দোষে, আল্লাহ্র অনুমতিতেঃ
… যখন ভালো কিছু হয়, তারা বলে, “এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে”, আর যখন খারাপ কিছু হয়, তারা বলে, “এটা তোমার (মুহম্মদ) কারণে হয়েছে।” তাদেরকে বলো, “দুটোই আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।” এই মানুষগুলোর সমস্যা কি যে তারা কিছুতেই বোঝে না তাদেরকে কি বলা হচ্ছে? তোমার উপরে ভালো যা কিছু হয়, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যা কিছু খারাপ হয়, তা তোমার কারণে। …(৪:৭৮-৭৯)
আমার অনুসারীদের উপরে তোমার (শয়তান) কোন ক্ষমতা থাকবে না , কিন্তু ওই সব পথভ্রষ্টরা ছাড়া যারা তোমাকে অনুসরণ করে। (১৫:৪২)
যখন সব ফয়সালা হয়ে যাবে (কিয়ামতের দিন), তখন শয়তান বলবে, “আল্লাহ তোমাদেরকে সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো ছিল সব মিথ্যা। তোমাদেরকে শুধু ডাকা ছাড়া আমার আর কোন ক্ষমতা ছিল না তোমাদের উপরে। তোমরাই আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। তাই আমাকে কোনো দোষ দিয়ো না বরং নিজেদেরকে দোষ দাও।”… (১৪:২২)
সুতরাং অন্যায় করে বলবেন না যে সব শয়তানের দোষ, শয়তান না থাকলে আপনি সেই অন্যায়গুলো করতেন না। শয়তান শুধুই আপনাকে আইডিয়া দেয়, আপনি নিজে জেনে শুনে অন্যায়গুলো করেন। আপনার সিদ্ধান্তের স্বাধীনতার অপব্যবহারের জন্য আপনি দায়ী, শয়তান নয়। আপনার টেবিলে একটা কম্পিউটারের ম্যাগাজিন পড়ে আছে, আর সামনে টিভিতে এমটিভি চ্যানেলে ব্রিটনি স্পিয়ারস নামে একজন শিক্ষিত, বয়স্ক, দুই সন্তানের মা, নামমাত্র কাপড় পড়ে লাফালাফি করছে। আপনি টিভি বন্ধ করে ম্যাগাজিনটা না পড়ে যদি টিভির দিকে ‘হা’ করে তাকিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সেটাতে শয়তানের দোষ নেই, পুরোটাই আপনার দোষ। সুতরাং মনে করবেন না যে, শয়তান না থাকলে আপনি ফেরেশতা হয়ে যেতেন।
তাহলে আল্লাহ মানুষকে এভাবে বানালো না কেন, যেন তারা খারাপ কাজ করতে না পারে?
আল্লাহ ফেরেশতা বানিয়েছেন, যারা কোন খারাপ কাজ করতে পারে না। তাদের সেই সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা নেই। মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে বানানোর উদ্দেশ্য ছিল না আরও দুটো বুদ্ধিমান সত্ত্বা সৃষ্টি করার, যাদের কোন সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা থাকবে না। আমাদেরকে নিয়ে আল্লাহর এক মহাপরিকল্পনা রয়েছে যেটা আমরা বুঝি না। সেই মহাপরিকল্পনার জন্য আল্লাহ আমাদেরকে এবং জ্বিন জাতিকে বুদ্ধিমান এবং একই সাথে সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আমরা অনেকে সেই সিদ্ধান্তের স্বাধীনটা ব্যবহার করে খারাপ কাজের সুযোগ থাকার পরেও ভালো কাজ করি, আবার অনেকে ভালো কাজের সুযোগ থাকার পরেও খারাপ কাজ করি। আমাদের সিদ্ধান্তের জন্য আমরাই দায়ী।
এরপরেও যদি আপনার অনেক প্রশ্ন, দ্বন্দ্ব থাকে এবং আপনি কোনভাবেই আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা, বা পৃথিবীতে মুসলমানদের দুরবস্থা মেনে নিতে না পারেন, তাহলে এই আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেনঃ
ওমর ভাই,
সালাম। আপনার লেখাগুলো আমি সবসময় পড়ি। এই অসামান্য প্রচেষ্টার জন্য আপনার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আরও একটি খুব ভাল লিখা পড়লাম। ধন্যবাদ।
একটি ছোট সাজেশন ছিল। আমার মনে হয় আপনার এই টপিক এর সাথে সুরা আল কাহাফে বর্ণিত মুসা এবং খিযির (তাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) এর কথোপকথন খুবই প্রাসঙ্গিক (কুরআন ১৮: ৬০-৮২)। আপনি হয়ত এটা যোগ করার কথা ভেবে দেখতে পারেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সত্য পথে পরিচালিত করুন।
Dear omar bhai,
which bangla font you used for your site?
at first login to your site it was ok but after few moment automatically a font installed and after then all bangla writting is breakdown, now it could not understadable.
Regards
Muhammad Abdul Halim
ভাই রাজাকার নিয়ে কিছু লিখুন। তারা তো ইসলাম সম্পর্কে জেনে শুনে ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করেছে এবং ধর্ষণ খুন করেছে। শাহবাগে তাদের নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে নিয়ে শিবির কর্মীরা ফেসবুকে মিথ্যা ছবি দিচ্ছে।
আলহামদুলিল্লাহ। অত্যন্ত সহজ, সরল ও তথ্য উপাত্যের মাধ্যমে সময়োপযোগী প্রবন্ধ লিখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকে বরকত ও ফযীলত দান করুন।
এবং মানুষের মাঝে যে বিপদ আসবে এবং তখন সে কি করবে আল্লাহ তা সূরা বাকারার ১৫৫ ও১৫৬ নং আয়্যাত সমূহে বলে দিয়েছেন।
“এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।” ২:১৫৫
“যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।” ২:১৫৬
পোষ্টে যে ছবিটা সেটা কি আপনার……..। ঠিক আছে….. ঠিক আছে….. ঠিক আছে…..চালিয়ে যান….. চালিয়ে যান।
না ভাই, সর্বোচ্চ পর্দার পরে যা দেখা যায়, সেটুকুই দেখা যাচ্ছে। কিছু বলতে চান?
Alhamdulillah, allah amake postguli porar shujog diesen. omor vai apnake dhonnobad.