আমরা অনেকে মনে করি কু’রআন হচ্ছে একটি উচ্চ মর্গের ধর্মীয় এবং ইতিহাস গ্রন্থ যা আমরা আরবিতে কিছুই না বুঝে নিয়মিত গুনগুণ করবো এবং আমাদেরকে আমাদের মুরব্বীরা এবং আলেমরা যা বলবেন, সেটাই আমরা কোন রকম চিন্তা ভাবনা না করে অনুসরণ করবো। কু’রআন হচ্ছে আলেমদের জন্য, সাধারণ মানুষদের জন্য নয়। আমাদের কু’রআন নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে; যেখানে লক্ষ লক্ষ আলেম আছেন যারা নিয়মিত বই লিখে, লেকচার দিয়ে আমাদেরকে কু’রআনের বাণী পৌঁছে দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের কু’রআন পড়ার কি দরকার? যদি আমরা কু’রআন পড়ে ভুল বুঝি? অনেকে ভাবেন – ধর্ম আসলে পুরোটাই বিশ্বাসের ব্যাপার, এখানে যুক্তি তর্কের কোন জায়গা নেই। বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। ধর্ম হচ্ছে কিভাবে চলবো, কিভাবে কথা বলব, কি খাবো, কি পরবো, কিভাবে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করবো – এ পর্যন্তই। যারা ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়, তারাই বিজ্ঞান, গণিত, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে মাথা ঘামায় এবং তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে, যা কিনা দোয়া দুরুদ পড়ে আখিরাতের কাজে লাগানো যেত। ধর্ম অনুসরণ করা মানেই হচ্ছে নিজের জানার আগ্রহ, জ্ঞান চর্চা, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনে সফল হবার চেষ্টা – এই সবকিছু থেকে দূরে সরে গিয়ে দিনরাত ধর্মীয় কাজগুলো করা। ধর্মের কোন কিছু প্রশ্ন না করে তা আল্লাহর বাণী ধরে নিয়ে সমস্ত সংশয়, সন্দেহ, অনীহা, প্রশ্নকে মনের ভিতরে চেপে রেখে কোন মতে জীবনটা পার করে দিলেই আমাদের জান্নাতের পথ খালাস হয়ে যাবে।
সম্পূর্ণ ভুল ধারণা!
প্রথমত আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিই করেছেন যেন আমরা عقل (আ’ক’ল) ব্যবহার করি এবং فكر (ফিকর) করি।
- عقل (আ’ক’ল) অর্থ বিচার-বুদ্ধি, যুক্তি, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, মানসিকতা, বোধ।
- فكر (ফিকর) অর্থ চিন্তা, উপলব্ধি, অনুধাবন, প্রতিফলন, মাথা ঘামানো।
তিনিই তো তোমাদেরকে অজৈব পদার্থ (ধুলা) থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর এক ফোঁটা তরল (পুরুষ, মহিলার শুক্র বিন্দু) থেকে, তারপর একটি গেঁথে থাকা ঝুলন্ত অবয়ব (ভ্রূণ) থেকে, তারপর তিনি তোমাদেরকে বের করে নিয়ে আসেন শিশু অবস্থায়, তারপর তিনি তোমাদেরকে শক্ত সামর্থ্য [যৌবন, প্রাপ্ত বয়স্ক] হতে দেন, তারপর তিনি তোমাদেরকে বৃদ্ধ হতে দেন – যদিও তোমাদের কেউ কেউ তার আগেই মারা যাও – এবং তোমাদেরকে তোমাদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পৌঁছাতে দেন এবং যাতে করে তোমরা আ’ক’ল (বিচার-বুদ্ধি) ব্যবহার কর। (৪০:৬৭)
এই আয়াতটির মধ্যে যে বিপুল পরিমাণের বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং চিন্তার খোরাক আছে তা যদি বাদও দেই, শুধু আয়াতের সমাপ্তিটি – “যাতে করে তোমরা বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার কর” – এটাই নির্দেশ করে যে – যেভাবে মানুষ মাত্র একফোঁটা তরল থেকে পুর্ণাঙ্গ শিশু হয়ে বের হয়ে একসময় বড় হয়ে শক্ত সামর্থ্য মানুষে পরিণত হয়, তারপর একদিন বুড়ো হয়ে মারা যায়, ঠিক একই ভাবে বিচার বুদ্ধি ব্যবহার করাটাও মানুষ হবার একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ।
লক্ষ্য করুন, মুসলমানরা যদি তাদের জীবনের একটা বড় অংশ চিকিৎসা বিজ্ঞানের পেছনে ব্যয় না করত, তাহলে তারা কোন দিনও বুঝতে পারত না আল্লাহ এই আয়াতে কিসের কথা বলেছেন। আজকে মুসলমানরা কু’রআনের এই আয়াতের প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারছে কারণ হাজার হাজার চিকিৎসা বিজ্ঞানী তাদের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন গাইনিকোলোজি, এমব্রাইওলজি নিয়ে গবেষণা করে। তাদের অবদানের কারণে আজকে আমরা কু’রআনের এই আয়াতটিসহ আরও শ’খানেক আয়াতের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে পারছি। যদি মানুষ আ’ক’ল এবং ফিকর না করত, তাহলে কু’রআনের একটি বড় অংশ সম্পর্কে আমরা “মুসলমানরা” অজ্ঞ থেকে যেতাম। আল্লাহ কু’রআনে আমাদেরকে কত জ্ঞান দিয়ে রেখেছেন, তা কোনদিন বুঝতে পারতাম না।
যদি আমরা আ’ক’ল ব্যবহার না করি, তাহলে আমরা জাহান্নামে গিয়ে চরম আফসোস করবোঃ
আর তারা বলবে, “হায়রে আমারা যদি শুনতাম অথবা বিচার-বুদ্ধি খাটাতাম, তাহলে আমরা গনগনে আগুনের অধিবাসীদের মধ্যে থাকতাম না। (৬৭:১০)
এই আয়াতটি আমাদেরকে এটাই শেখায় যে আমরা যদি নবীর (আঃ) প্রচারিত বাণী (কু’রআন) শুনি এবং বুদ্ধি খাটাই, তাহলে আমরা জাহান্নাম থেকে নিরাপদে থাকতে পারবো। সুতরাং ফিকর এবং আ’ক’ল এ দুটোই মানুষকে সঠিক পথে নেবার জন্য যথেষ্ট।
তারা কি নিজেদেরকে নিয়ে চিন্তা (ফিকর) করে না? আল্লাহ আকাশগুলো এবং পৃথিবীকে এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে তা কোন গভীর উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করেন নি এবং তাও একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তারপরেও অনেক মানুষ বিশ্বাস করে না যে তারা তাদের প্রভুর সামনে দেখা করবে। (৩০:৮)
মানুষ যদি নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে, তার কামনা, বাসনা, চাহিদা, পরিকল্পনাগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবে, সে বুঝতে পারবে যে এই সমস্ত বিশ্ব সৃষ্টির পিছনে এক বিরাট উদ্দেশ্য আছে এবং সবকিছুই একটি চরম পরিণতির দিকে যাচ্ছে, এবং একসময় তাকে আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে জবাব দিতে হবেই।
আল্লাহ কু’রআনে ৪৯ বার আ’ক’ল এবং ১৮ বার ফিকর করতে বলেছেন। যদি যোগ করি তাহলে পুরো কু’রআনে আল্লাহ আমাদেরকে কমপক্ষে ৬৭ বার চিন্তা করতে, বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করতে বলেছেন। এর সাথে তুলনা করুন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কাজ – নামাযের কথা, যা প্রায় ৮৯ বার কু’রআনে এসেছে। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় আ’ক’ল এবং ফিকর আল্লাহর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তারা কি কু’রআন সম্পর্কে চিন্তা করে না, তাদের অন্তর কি তালাবন্ধ? (৪৭:২৪)
কু’রআনের এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ বিশেষ ভাবে মানুষকে চিন্তা এবং বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করতে বলেছেনঃ
৬:৩২, ৭:১৬৯, ৭:১৮৪, ৬:২২, ১০:১৬, ১০:৪২, ১১:৫১, ১২:১০৯, ২১:১০, ২১:৬৭, ২৩:৮০, ২৬:২৮, ২৮:৬০, ৩৬:৬২, ৩৪:৪৬, ২:১৬৪, ১৩:৩-৪, ১৬:১০-১২, ১৬:৬৭-৬৯, ৩০:২৪, ৩০:২৮, ৩৯:৪২, ৪৫:৫, ৪৫:১৩।
আ’ক’ল এবং ফিকর করাটা কোন ঐচ্ছিক ব্যপার নয় যে সেগুলো না করলেও সফল মুসলমান হয়ে জান্নাতে যাওয়ার পথ নিশ্চিত হয়ে যাবে। বরং আ’ক’ল ব্যবহার করাটা সঠিক পথ প্রাপ্ত হবার একটি পূর্বশর্তঃ
অনেকে আছে যারা তোমার (মুহম্মদ) কথা ঠিকই শুনে, কিন্তু তুমি কি বধিরকে কথা শোনাতে পারবে যদি তারা বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার না করে? (১০:৪২)
এই আয়াতটি এটাই পরিস্কার করে যে যখন কেউ নিয়মিত বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করবে, তখন সে আল্লাহর বাণী উপলব্ধি করে তা থেকে উপকৃত হবে। এর চেয়েও কঠোর আয়াত হলঃ
আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে জঘন্য জীব হচ্ছে সেসব বধির এবং বোকারা যারা তাদের বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করে না। (৮:২২)
এই আয়াত অনুসারে যেসব মানুষ তাদের আ’ক’ল ব্যবহার করে না, তারা সৃষ্টির সবচেয়ে জঘন্য জীব। কারণ বাকি সব জীবকে আল্লাহ যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন, তারা সেসব বৈশিষ্ট্য ঠিকই বিকাশ করে, শুধু মানুষ বাদে। মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান, বিচার-বুদ্ধি, চিন্তা, গবেষণা, প্রতিফলনের ক্ষমতা দিয়ে পাঠানোর পরেও মানুষ অলসতার কারণে সেই গুণগুলোকে ব্যবহার করে না, বিকাশ করে না, সত্যিকারের মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে না। এধরণের মানুষরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সৃষ্টির সবচেয়ে জঘন্য জীব।
নিশ্চয়ই ‘আমি’ জ্বিন এবং মানবজাতির অনেকের গন্তব্য নির্ধারণ করেছি জাহান্নাম – যাদের অন্তর আছে কিন্তু তারা তা বোঝার জন্য ব্যবহার করে না, যাদের চোখ আছে যা দিয়ে তারা দেখে না, যাদের কান আছে যা দিয়ে তারা শোনে না। তারা গবাদি পশুর মত – না তার চেয়েও পথ হারা। এরাই হচ্ছে অবোধ। (৭:১৭৯)
আ’ক’ল না ব্যবহার করার একটি সাধারণ অজুহাত হল আগের প্রজন্মের মানুষেরা এবং মুরব্বীরা যা করে গেছেন এবং যা করতে বলেন, তার অন্ধ অনুকরণ এবং অনুসরণ করা। কু’রআন এটি সম্পূর্ণ নিষেধ করে এবং যারা এরকম করে তাদেরকে আবারও গবাদি পশুর সাথে তুলনা করেঃ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “আল্লাহ যা প্রকাশ করেছেন তা অনুসরণ কর”, তারা বলে, “না না! আমাদের বাপ-দাদারা যা অনুসরণ করেছে আমরাও তাই অনুসরণ করব”। কি! যদিও তাদের বাপ-দাদারা কিছুই বুঝতো না এবং তারা সঠিক পথেও ছিল না? যারা অবিশ্বাস করে তাদের উদাহরণ হল সেটার মত যেটাকে ডাকাডাকি করে কি যে বলা হচ্ছে সেটা তার কিছুই বোঝে না, ওর কাছে সেগুলো কিছু শব্দ আর চিৎকার ছাড়া আর কিছু না – বধির, মূক এবং অন্ধ, এরা কিছুই বোঝে না। (২:১৭০-১৭১)
বিশেষ করে বুড়ো বয়সে গিয়ে মুসলমানরা মরিয়া হয়ে যায়। তখন টুপি-দাড়ি ওলা কেউ তাকে যা করতে বলে, সে তাই করে। নিজে থেকে কু’রআন এবং সাহিহ হাদিস যাচাই করার ঝুঁকি নিতে চায় না। তাকে যদি কেউ বলে হাদিসে আছে বছরে একটি বিশেষ রাতে সারা রাত নামায পড়লেই আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, তখন সে সেই বুড়ো বয়সেই সারা রাত কষ্ট করে নামায পড়বে এই আশায় যে তার সারা জীবনের সব ঘুস, সুদ, স্বামী-স্ত্রী-সন্তান্দের সাথে অন্যায় আচরণ, অবিচার, মানুষকে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, গরিব আত্মীয়দের অবহেলা, সুদের টাকা বা সুদ দেওয়া লোনের টাকায় কেনা বাড়ি, গাড়ি, জমি – যত পাপ কাজ করেছে সারা জীবনে সব এই এক রাতেই সাফ হয়ে যাবে। সে আ’ক’ল ব্যবহার করা বা ফিকর করার কোন ঝুঁকি নিতে যাবে না যে সত্যিই এই ধরণের কোন একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা করলে কি না সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়, এরকম কোন ‘ভিআইপি পাসের’ কথা আল্লাহ ইসলামের প্রাথমিক উৎস কু’রআনে বলেছেন কিনা, বা আনুষঙ্গিক উৎস সহিহ হাদিসেও আছে কি না। যদিও তাকে বলা হয় যে এই ধরণের ইবাদতের কথা শুধুই মাওদু’ (জাল) হাদিসে আছে বলে আলেমরা সবাই স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং এর কোনই কু’রআন বা সহিহ, এমনকি হাসান (ভাল) হাদিসেরও উল্লেখ নেই, তারপরেও সে সেটা করবে ‘যদি লাইগা যায়’ বা ‘দোষের তো কিছু নাই’ ধরণের মরিয়া মনোভাব নিয়ে। অথচ সে তার গরিবের রক্ত চোষা সুদের টাকায় কেনা বাড়ি, গাড়ি, জমি ফেরত দিবে না, সে যাদের সাথে অন্যায় করেছে তাদের কাছে মাফ চেয়ে তার জীবন থাকতে তাদের যথেষ্ট উপকার করবে না, সে তার ব্যাংকের টাকা পয়সা গরিব দুঃখীদেরকে দান করবে না। সে সারা রাত জেগে কখনও কু’রআন নিয়ে গবেষণা করবে না যা কিনা সন্দেহাতীত ভাবে সবচেয়ে বড় ইবাদত। তার অবস্থা এমন হয়ে যায় যে তাকে যদি কেউ বলে সকালে উঠে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে তিন বার কুলি করলে দশ নেকি পাওয়া যায় বলে হাদিস আছে, সে তাই করে যাবে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত।
হয়ত একারণেই যারা আ’ক’ল ব্যবহার করে না – তারা আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে জঘন্য প্রাণী। নিচের আয়াতটি এই ধরণের মানুষদের একটি চমৎকার উদাহরনঃ
কোন সত্ত্বা বিশ্বাস করতে পারবে না যদি আল্লাহ ইচ্ছা না করেন, আর যারা বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার করে না, তিনি তাদেরকে কলুষিত [ঘৃণিত, নীচ, হীন, দুর্গতি] করে দেন। (১০:১০০)
এই আয়াতটি যদিও বলে যে আল্লাহ ইচ্ছা না করলে কেউ বিশ্বাসী হতে পারবে না, কিন্তু তার মানে এই না যে সঠিক ভাবে চিন্তা এবং বিচার-বুদ্ধির প্রয়োগ করলেও বিশ্বাস অর্জন করা যাবে না। বরং এই আয়াতের অর্থ হল মানুষের সব প্রচেষ্টার মত এই প্রচেষ্টাটিও মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে চিন্তা করা এবং বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করার অর্থ হচ্ছে সকল ধরণের দলিল, প্রমাণকে সঠিকভাবে, নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই করা এবং অপরিপক্কভাবে শেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছে না যাওয়া। এটা বলা সোজা, কিন্তু করা খুবই কঠিন। আমাদের সভাবই হচ্ছে আমরা যেই সমাপ্তি বা সিদ্ধান্তের প্রতি পক্ষপাতী থাকি, সেটার পক্ষে যে প্রমাণ পাওয়া যায় সেগুলোকে যত্ন করে সংগ্রহ করি আর তার বিপক্ষের প্রমাণগুলোকে উপেক্ষা করি। ইতিহাস আমাদেরকে অনেকবার দেখিয়েছে যে অত্যন্ত জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীরাও অনেক গবেষণার পর সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়েছেন। আর ধর্মের ব্যপারে এধরণের ভুল করার সম্ভাবনা আরও বেশি, কারণ আমাদের সাথে সবসময় একজন সঙ্গী আছে যে আমাদেরকে ভুল সিদ্ধান্তে নিয়ে যেতে সবসময় আপ্রাণ চেষ্টা করে। এছাড়াও ধর্মীয় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন কারণঃ ১) ধর্মীয় সত্যকে উপলব্ধি করাটা বৈজ্ঞানিক সত্য উপলব্ধি করা থেকে বেশি বিভ্রান্তিকর। ২) ধর্মীয় সত্য অনেক সময় আমাদের সংস্কৃতি, জীবন যাত্রা, অভ্যাস, ধ্যান ধারণায় আমূল পরিবর্তন দাবি করে যা মানুষের পক্ষে গ্রহণ করাটা সম্ভব হয় না এবং বৈজ্ঞানিক সত্য থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি মানুষের আক্রমণের এবং বাধার শিকার হয়। ৩) অনেক সময় ধর্মীয় সত্য প্রকাশ হয়ে গেলে আলেম সমাজের জন্য চরম অপমানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, রাজনৈতিক ভাবে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, যে কারণে তারাই ধর্মীয় সত্যকে অনেক সময় চাপা দিয়ে রাখেন নিজের সন্মান, স্বার্থ এবং দলীয় স্বার্থ বজায় রাখার জন্য। এসব কারণেই আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে বিকশিত করে, সঠিক পদ্ধতিতে চিন্তা করার প্রক্রিয়াতে পারদর্শী হয়ে, জ্ঞানবিজ্ঞানের উচ্চ শিখরে পৌঁছে আল্লাহকে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্য ও সৃষ্টি জগতের উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করার জন্য প্রত্যেক মুসলমানকে বারবার নির্দেশ দিয়েছেন।
সবশেষে বলতে চাইঃ
আর তোমার যা সম্পর্কে জ্ঞান নেই তা অনুসরণ করবে না, নিশ্চয়ই শ্রবণ, দৃষ্টি এবং বুদ্ধিমত্তা – এই সবগুলোর ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। (১৭:৩৬)
যারা শোনে, যখন তাদেরকে কিছু বলা হয়, এবং তার মধ্যে যা ভালো তা অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদেরকেই সঠিক পথ দেখান এবং তারাই, যারা বোঝে, তাদের অন্তরভুক্ত। (৩৯:১৮)
[সুত্রঃ এপ্রিল ৮, ২০০৫ এ ডঃ আহমাদ শাফাত এর জুম্মা খুত্বা]